খবরটা শুনে আপনার কী মনে হলো? যখন শুনলেন যে ‘Housefull 5’ আসছে! আমার মতো আপনারও কি মনে একটা মিশ্র অনুভূতি তৈরি হয়েছিল? একদিকে সেই পুরনো দিনের স্মৃতি, অক্ষয় কুমার আর রিতেশ দেশমুখের বোকা বোকা কমেডিতে পেট ফেটে হাসার নস্টালজিয়া। অন্যদিকে, একটা দীর্ঘশ্বাস। আবার সেই একই জিনিস? এই প্রশ্নটা কি আপনার মনেও আসেনি?
আসুন, আজ কোনো রিভিউ লিখতে বসিনি। কারণ ছবি তো এখনো মুক্তি পায়নি। বরং চলুন, একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে একটু স্মৃতির পাতা উল্টাই। আর বোঝার চেষ্টা করি, ‘হাউজফুল ৫’ নিয়ে আমাদের এত আশা–আশঙ্কার কারণটা ঠিক কী।
যখন ‘হাউজফুল’ মানে ছিল নিখাদ বিনোদন
সময়টা ছিল ২০১০ সাল। ‘হাউজফুল’ যখন প্রথম এলো, তখন আমাদের প্রত্যাশা খুব বেশি ছিল না। আমরা শুধু চেয়েছিলাম একটু হাসতে। আর সাজিদ খানের সেই ছবি আমাদের নিরাশ করেনি। গল্পে হয়তো খুব বেশি যুক্তি ছিল না। কিন্তু তাতে কী? আরশাদ ওয়ারসি, রিতেশ দেশমুখ আর অক্ষয় কুমারের সেই ট্রায়ো স্ক্রিনে যেন আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল। তাদের টাইমিং ছিল অসাধারণ।
মনে আছে সেই দৃশ্যগুলো? যখন একজন আরেকজনের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করত? কিংবা বোমান ইরানির সেই অসহায় বাবার চরিত্র? তখন কমেডি ছিল সহজ, সরল এবং ভীষণভাবে কানেক্টিং। আমরা হাসতে হাসতে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়েছিলাম। কোনো জটিল সমীকরণ ছিল না। ছিল শুধু নিখাদ আনন্দ। আর সেখানেই ‘হাউজফুল’ তার প্রথম বাজিটা জিতে নিয়েছিল।
‘Housefull 5’ একটি সফল ফর্মুলার জন্ম
‘হাউজফুল’ এর সাফল্য একটা নতুন ফর্মুলার জন্ম দেয়। একদল তারকা, লন্ডনের ঝলমলে লোকেশন, কিছু কনফিউশন আর অনেকগুলো বোকা বোকা জোকস। এই ফর্মুলাটা কাজে দিয়েছিল। এরপর এলো ‘হাউজফুল ২’। এবার তারকার মেলা আরও বড় হলো। জন আব্রাহাম, ঋষি কাপুর, মিঠুন চক্রবর্তীর মতো অভিনেতারা যোগ দিলেন। গল্প আরও বেশি জট পাকানো, আরও বেশি চরিত্র। সত্যি বলতে, দ্বিতীয় পর্বও কিন্তু দারুণ ব্যবসা করেছিল। আমরাও বেশ মজা পেয়েছিলাম। কারণ তখনও ফর্মুলাটা টাটকা ছিল।
ফর্মুলার পুনরাবৃত্তি: হাসির বদলে যখন বিরক্তি এলো
সমস্যাটা শুরু হলো এরপর থেকে। ‘হাউজফুল ৩’ এবং বিশেষ করে ‘হাউজফুল ৪’ আসার পর মনে হতে লাগলো, নির্মাতারা যেন দর্শকদের বুদ্ধিমত্তাকে চ্যালেঞ্জ করছেন। একই জোকস, একই ধরনের পরিস্থিতি বারবার ফিরে আসতে লাগলো। কমেডির মান ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করলো। যে Slapstick Comedy দেখে আমরা একসময় হেসে লুটোপুটি খেতাম, সেটাই কেমন যেন একঘেয়ে এবং বিরক্তিকর লাগতে শুরু করলো।
বিশেষ করে ‘হাউজফুল ৪’ এর কথা বলা যাক। পুনর্জন্মের মতো একটা জটিল বিষয়কে কমেডির মোড়কে আনা হয়েছিল। কনসেপ্টটা মজার ছিল, অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু তার বাস্তবায়ন ছিল ভয়াবহ। এতগুলো চরিত্র, দুটো ভিন্ন টাইমলাইন, সব মিলিয়ে গল্পটা যেন একটা জগাখিচুড়ি হয়ে গিয়েছিল। হাসির চেয়ে বেশি করে যেন মাথা ধরছিল। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে মিমের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। অনেকেই বলেছিলেন, “এবার একটু ছাড় দিন!”
তাহলে প্রশ্নটা হলো, যেখানে একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি তার সেরা সময়টা পার করে এসেছে, সেখানে ‘হাউজফুল ৫’ কেন?
‘Housefull 5’ এর ঘোষণা এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড়
আর এখানেই আসে সাম্প্রতিক ঘোষণা। প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা যখন ঘোষণা করলেন যে ‘হাউজফুল ৫’ ২০২৫ সালে মুক্তি পাবে, তখন থেকেই ইন্টারনেট দুই ভাগে বিভক্ত।
- একদল সমর্থক: যারা এখনও এই ফ্র্যাঞ্চাইজির ভক্ত। তাদের কাছে ‘হাউজফুল’ মানেই ছুটি কাটানোর মতো একটা ব্যাপার। তারা যুক্তি–তর্ক খোঁজেন না, শুধু বিনোদন চান। তাদের বক্তব্য, “আমরা হাসতে চাই, আর হাউজফুল আমাদের হাসায়। ব্যস!”
- আরেকদল সমালোচক: যাদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। তাদের মতে, বলিউডকে এই ধরনের ‘ব্রেনলেস কমেডি’র বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। তাদের প্রশ্ন, “নতুন গল্প কি একেবারেই শেষ হয়ে গেছে?” তারা ভালো চিত্রনাট্য, বুদ্ধিদীপ্ত কমেডি দেখতে চান।
এই দুই দলের তর্ক–বিতর্কের মধ্যেই ‘হাউজফুল ৫’ নিয়ে আমাদের কৌতূহল বাড়ছে। পরিচালক হিসেবে এবার থাকছেন তরুণ মনসুখানি, যিনি ‘দোস্তানা’র মতো স্টাইলিশ কমেডি বানিয়েছেন। এটা কি কোনো নতুনত্বের ইঙ্গিত? নাকি সেই পুরনো পথেই হাঁটবেন তিনি?
কেন ‘Housefull 5’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজি?
আসলে, ‘হাউজফুল ৫’ শুধু একটি সিনেমা নয়। এটি কয়েকটি কারণে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজেক্ট।
প্রথমত, অক্ষয় কুমারের জন্য:
অক্ষয় কুমার গত কয়েক বছর ধরে বক্স অফিসে বেশ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। তার একের পর এক ছবি ফ্লপ হয়েছে। এমন অবস্থায়, ‘হাউজফুল’–এর মতো একটি পরীক্ষিত এবং সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি তার জন্য একটা ‘সেফ বেট’। এই ছবির সাফল্য তার কেরিয়ারে নতুন করে অক্সিজেন জোগাতে পারে। কিন্তু উল্টোটা হলে, প্রশ্ন উঠবে তার ব্র্যান্ড ভ্যালু নিয়ে।
দ্বিতীয়ত, কমেডি জনরার জন্য:
একটা সময় ছিল যখন বলিউডে প্রিয়দর্শন, ডেভিড ধাওয়ানের মতো পরিচালকেরা একের পর এক দুর্দান্ত কমেডি উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এখন ভালো কমেডি ছবির বড্ড অভাব। ‘হাউজফুল ৫’ যদি সত্যিই দর্শকদের হাসাতে পারে, তাহলে এই জনরা আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পাবে।
তৃতীয়ত, আমাদের জন্য, অর্থাৎ দর্শকদের জন্য:
আমরা দর্শকরাও কিন্তু আজকাল অনেক সচেতন। আমরা ভালো কনটেন্ট দেখতে চাই। কোরিয়ান থ্রিলার থেকে শুরু করে ইউরোপিয়ান ড্রামা, সবকিছুই এখন আমাদের হাতের মুঠোয়। এই অবস্থায়, ‘হাউজফুল ৫’–কে শুধু পুরনো ফর্মুলায় চললে হবে না। তাকে নতুন কিছু করে দেখাতেই হবে। আমাদের প্রত্যাশা এখন অনেক বেশি।
একজন দর্শক হিসেবে আমার চাওয়া
আমি ব্যক্তিগতভাবে কী চাই? আমি চাই ‘হাউজফুল ৫’ আমাকে অবাক করে দিক। আমি চাই না সেই একই সেক্সিস্ট জোকস, সেই একই শরীরী ভাষার স্থূল প্রয়োগ। আমি চাই একটা ভালো গল্প। চরিত্রগুলো যেন বিশ্বাসযোগ্য হয়। তাদের বোকামি দেখে যেন আমার হাসি পায়, বিরক্তি না আসে।
আমি চাই রিতেশ দেশমুখের অসাধারণ কমিক টাইমিংয়ের সঠিক ব্যবহার হোক। আমি চাই অক্ষয় কুমার তার পুরনো ম্যাজিক ফিরিয়ে আনুন। আমি চাই, ছবিটা শেষ হওয়ার পর মনে হোক, পয়সাটা উসুল হলো। মনে হোক, হ্যাঁ, এই ফ্র্যাঞ্চাইজিটার এখনও দেওয়ার মতো কিছু বাকি আছে।
নির্মাতারা বলছেন, এটি ভারতের প্রথম কমেডি সিনেমাটিক ইউনিভার্স হতে চলেছে, যেখানে আগের সব ছবির চরিত্ররা ফিরে আসবে। ভাবনাটা নিঃসন্দেহে দারুণ। কিন্তু এতগুলো চরিত্রকে একসঙ্গে সামলানোটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। গল্পটা যদি ঠিকমতো বোনা না হয়, তাহলে এই ‘ইউনিভার্স’ শুরুতেই মুখ থুবড়ে পড়বে।
শেষ কথা
সব মিলিয়ে, ‘Housefull 5’ নিয়ে আমাদের মনে আশা এবং আশঙ্কা দুটোই কাজ করছে। একদিকে আছে নস্টালজিয়া আর পুরনো ভালোবাসার টান। অন্যদিকে আছে পুনরাবৃত্তির ভয় আর ভালো কিছু দেখার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
ছবিটা কেমন হবে, তা তো সময়ই বলে দেবে। কিন্তু একটা কথা নিশ্চিত। ২০২৫ সালে যখন ‘হাউজফুল ৫’ মুক্তি পাবে, তখন আমরা অনেকেই হয়তো প্রেক্ষাগৃহে যাব। কেউ যাব পুরনো অভ্যাসের বশে, কেউ যাব নতুন কিছুর আশায়। আর ছবিটা দেখার পর আমাদের প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটাই নির্ধারণ করে দেবে এই ফ্র্যাঞ্চাইজির ভবিষ্যৎ।
আপনি কি ‘হাউজফুল ৫’ দেখার জন্য প্রস্তুত? আপনার প্রত্যাশাটাই বা কী? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না! আলোচনাটা চলুক।
Pingback: 'তাণ্ডব' সিনেমা রিভিউ: ঈদে শাকিবের ন্যায়ের তাণ্ডব কাঁপাল বাংলাদেশ! - Bongo Pulse