সিলেটে বন্যা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অব্যবস্থাপনা ও আমাদের ভবিষ্যৎ

সিলেটে বন্যা
You are currently viewing সিলেটে বন্যা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অব্যবস্থাপনা ও আমাদের ভবিষ্যৎ

ভাইসাব, আর পাররাম না!” – কথাগুলো যখন সিলেট শহরের কোনো এক আশ্রয়কেন্দ্রে বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব আব্দুল চাচার মুখ থেকে শুনি, তখন বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে। প্রতি বছর বর্ষা আসে, আর সাথে করে নিয়ে আসে সিলেটে বন্যানামক এক বিভীষিকা। এই বাক্যটা এখন আর শুধুমাত্র খবরের কাগজের শিরোনাম নয়, এটা যেন সিলেটবাসীর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য, অভিশপ্ত অংশে পরিণত হয়েছে। আমরা যারা শহরের কোলাহলে নিরাপদে বসে কফির কাপে চুমুক দিই, তাদের কাছে হয়তো এই বন্যার ভয়াবহতা শুধুই কিছু ছবি বা ভিডিওর সমষ্টি। কিন্তু যারা প্রতি মুহূর্তে এই জলের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন, তাদের কাছে এটা জীবনমৃত্যুর এক নির্মম খেলা।

বাংলাদেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের নয়নাভিরাম এক বিভাগ সিলেট, যাকে আমরা ভালোবেসে বলি ৩৬০ আউলিয়ার দেশ“, “প্রকৃতি কন্যার লীলাভূমি। পাহাড়, নদী, আর সবুজ চা বাগানের এই অপরূপ সমন্বয়ের আড়ালে যে এমন এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা লুকিয়ে থাকতে পারে, তা যেন বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। ২০২২ সালের সেই প্রলয়ঙ্করী বন্যা, যা কিনা পঞ্চাশ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিল, তারপর ২০২৩এর ধাক্কা, আর এখন ২০২৪ পেরিয়ে যখন আমরা ২০২৫এর বন্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, তখন একটা প্রশ্নই বারবার ঘুরেফিরে আসে – আমরা কি সত্যিই কোনো বড়সড় জলবায়ু বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে? নাকি আমাদের নিজেদের ভুলের মাশুল গুনছি আমরা? চলুন, আজ একটু গভীরে ডুব দিই, বোঝার চেষ্টা করি সিলেটে বন্যার আদ্যোপান্ত।

 

সিলেটে বন্যা’র ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট: কেন বারবার এই আঘাত?

সিলেটকে বুঝতে হলে এর ভৌগোলিক অবস্থানটা একটু খুঁটিয়ে দেখা দরকার। সিলেট অঞ্চল মূলত একটি নিচু, হাওরবেষ্টিত এলাকা। এর বুক চিরে বয়ে গেছে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সব নদী। মজার ব্যাপার হলো, এই নদীগুলোর বেশিরভাগেরই জন্ম কিন্তু আমাদের দেশে নয়, বরং ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলে। ফলে, যখনই ওইসব অঞ্চলে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়, সেই পানির ঢল হুড়মুড়িয়ে নেমে আসে সিলেটের দিকে। আর আমাদের হাওরগুলো, যেগুলো একসময় ছিল এই অতিরিক্ত পানি ধারণের প্রাকৃতিক আধার, সেগুলোও যেন আজ আর পেরে উঠছে না।

তাহলে, মূল কারণগুলো কী দাঁড়াচ্ছে?

  • প্রাকৃতিক কারণ:

    • উজানের ঢল (Flash Flood): এটাই বোধহয় সিলেটে বন্যা“-র সবচেয়ে বড় ভিলেন। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি, যেখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়, তার খুব কাছেই আমাদের সিলেট। ফলে, কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণেই সেখানে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢল চোখের পলকে সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত করে ফেলতে পারে। এই ফ্ল্যাশ ফ্লাড এতটাই দ্রুত আর বিধ্বংসী হয় যে, মানুষজন বুঝে ওঠার আগেই তাদের ঘরবাড়ি, সহায়সম্বল সব কেড়ে নেয়।
    • মৌসুমি অতিবর্ষণ: বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের খামখেয়ালিপনায় এই বৃষ্টিপাত এখন আর স্বাভাবিক নেই। হয় প্রয়োজনের সময় বৃষ্টি নেই, আর যখন হচ্ছে, তখন যেন আকাশ ভেঙে পড়ছে – এমন অবস্থা।
    • নদীর স্বাভাবিক প্রবাহে বাধা: পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, নদীর গতিপথ পরিবর্তন – এসব কিছুই পানির স্বাভাবিক প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে বন্যার তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়।
  • মানবসৃষ্ট কারণ:

    • অপরিকল্পিত নগরায়ণ: সিলেট শহরসহ আশেপাশের এলাকাগুলোতে যেভাবে কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে উঠছে, তাতে পানি নামার পথগুলো প্রায় বন্ধ। একসময়ের খাল, বিল, পুকুর ভরাট করে তৈরি হচ্ছে বড় বড় অট্টালিকা। প্রকৃতি তার প্রতিশোধ তো নেবেই!
    • নদী দখল ও খননের অভাব: “নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে” – এই কথাটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু মানি কজন? সিলেটের নদীগুলো আজ দখল আর দূষণের শিকার। নিয়মিত ড্রেজিং বা খনন না করায় এদের পানি ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে, অল্প বৃষ্টিতেই পানি উপচে পড়ছে।
    • সঠিক পূর্বাভাস ও প্রস্তুতির অভাব: বন্যা আসবে, এটা তো নতুন কিছু নয়। কিন্তু প্রতিবারই যেন আমরা অপ্রস্তুত থাকি। পূর্বাভাস ব্যবস্থার দুর্বলতা, আশ্রয়কেন্দ্রের অপ্রতুলতা, উদ্ধারকাজে ধীরগতি – এই বিষয়গুলো সিলেটে বন্যা“-র ক্ষয়ক্ষতিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

এই প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণগুলোর এক জটিল মিথস্ক্রিয়াই সিলেটবাসীর জীবনকে করে তুলেছে এক অন্তহীন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি।

 

flood in sylhet

ইতিহাসের পাতা থেকে: আমরা কি আদৌ কিছু শিখছি?

সিলেটে বন্যাতো আজকের ঘটনা নয়। দশকের পর দশক ধরে এই অঞ্চলের মানুষ বন্যার সাথে লড়াই করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর তীব্রতা আর ঘনঘন পুনরাবৃত্তি আমাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। চলুন, একটু ফিরে তাকাই গত কয়েক বছরের ভয়াবহতার দিকে:

  • ২০২২ সালের মহাপ্রলয়:

    • বিবরণ: এটাকে বলা হচ্ছিল স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। কেউ কেউ বলছিলেন, গত ৫০ বছরেও এমন দুর্যোগ দেখেনি সিলেট। সুনামগঞ্জ আর সিলেট শহর যেন পরিণত হয়েছিল পানির রাজ্যে। রাস্তায় গাড়ি নয়, চলছিল নৌকা।
    • ক্ষয়ক্ষতি: সরকারি হিসাবেই ৩২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যাটা আরও বেশি। প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন।
    • প্রভাব: বিদ্যুৎ ছিল না, মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছিল না, সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। একটা গোটা অঞ্চলের মানুষ যেন আধুনিক সভ্যতা থেকে এক লহমায় ছিটকে পড়েছিল আদিম অন্ধকারে। এই বন্যার ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই
  • ২০২৩ সালের পুনরাবৃত্তি:

    • নতুন আতঙ্ক: মানুষ যখন ২০২২এর ধাক্কা সামলে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই আবার আঘাত। মে ও জুন মাসে দুই দফা বন্যা। যেন প্রকৃতির এক নির্মম পরিহাস!
    • জনদুর্ভোগ: ১০ লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি। ভাবুন তো, ঈদের খুশির দিনে যখন মানুষ নতুন পোশাকে সেজে ওঠে, তখন সিলেটের মানুষজন আশ্রয় খুঁজছে, একমুঠো খাবারের জন্য হাহাকার করছে। ২০২৩ সালের ঈদের দিন ভোরে সেই ভয়াবহ বৃষ্টিপাত আর ঢলের স্মৃতি আজও অনেককে তাড়িয়ে বেড়ায়। অপ্রস্তুত মানুষগুলো পড়েছিল চরম বিপদের মুখে।
  • ২০২৪ সালের শহুরে বন্যা:

    • বন্যা এখন শহরে: আগে হয়তো গ্রামের পর গ্রাম ডুবতো, শহরগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ থাকতো। কিন্তু ২০২৪ সালে আমরা দেখলাম, সিলেট শহরের প্রধান সড়কগুলোতেও নৌকা চলছে। মানুষের বাড়ির একতলা, নিচতলা পানিতে থইথই করছে। যেন ভেনিস নয়, এ আমাদের প্রাণের সিলেট!
    • সামাজিক বিপর্যয়: স্কুলকলেজ দিনের পর দিন বন্ধ। পরীক্ষা পিছিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। বন্যার পানি শুধু ঘরবাড়ি ডোবায় না, একটা গোটা প্রজন্মের ভবিষ্যৎও ডুবিয়ে দেয়।
  • ২০২৫ সালের বর্তমান চিত্র:

    • অব্যাহত সংকট: এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও (কাল্পনিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী) সিলেটের অবস্থা ভালো নয়। ১৩টি উপজেলার প্রায় দেড় হাজার গ্রাম প্লাবিত। প্রায় সোয়া আট লক্ষ মানুষ সরাসরি বন্যা কবলিত। সুরমা আর কুশিয়ারার পানি এখনও বিপদসীমার অনেক উপরে। হাজার হাজার পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটাচ্ছে, যাদের চোখেমুখে শুধুই অনিশ্চয়তা আর আতঙ্ক। সিলেটে বন্যাযেন এক অন্তহীন দুঃস্বপ্ন।

এই ধারাবাহিকতা একটা কথাই স্পষ্ট করে দেয় – আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিইনি। প্রতিবার বন্যা আসে, কিছুদিনের জন্য হৈচৈ হয়, ত্রাণ বিতরণ হয়, তারপর আবার সব চুপচাপ। দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের দিকে আমাদের নজর বড্ড কম।

 

সিলেটে বন্যা’র মূল কারণ: প্রকৃতি, অব্যবস্থাপনা নাকি স্রেফ অবহেলা?

আসুন, একটু তলিয়ে দেখি, কেন এই ভয়াবহতা।

. অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল:

সিলেটে জুনজুলাই মাস মানেই ভারী বর্ষণ। এটা প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই বৃষ্টিপাতের ধরনে একটা বড়সড় পরিবর্তন এসেছে। ভারতের মেঘালয়, বিশেষ করে চেরাপুঞ্জি আর শিলংএর বৃষ্টি যেন সিলেটের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২২ সালের সেই বন্যার সময়, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৯০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল! ভাবা যায়? এই বিপুল পরিমাণ পানি যখন পাহাড়ি ঢল হয়ে সুরমাকুশিয়ারা দিয়ে নামে, তখন সিলেট অঞ্চলের আর রক্ষা থাকে না। নদীগুলো ফুলেফেঁপে উঠে দুকূল ছাপিয়ে গ্রামের পর গ্রাম, শহরের পর শহর গ্রাস করে নেয়। এই পাহাড়ি ঢলের গতি এত বেশি থাকে যে, মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ারও পর্যাপ্ত সময় পায় না।

. নদী ভরাট ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ:

একটা সময় ছিল, যখন সিলেট শহরের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া অসংখ্য খাল আর ছোট ছোট নদীগুলো ছিল পানি নিষ্কাশশনের প্রধান মাধ্যম। বৃষ্টির পানি হোক বা বন্যার অতিরিক্ত পানি, সহজেই নেমে যেত। কিন্তু আজ? সেই খালগুলো কোথায়? বেশিরভাগই হয় দখল হয়ে গেছে, নয়তো আবর্জনায় ভরাট হয়ে তার স্বাভাবিক নাব্যতা হারিয়েছে। নদীর পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, দোকানপাট। অপরিকল্পিত নগরায়ণের চাপে শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। ফলে, সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় পানি জমে যায়, আর বড় বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। সিলেটে বন্যাএখন শুধু গ্রামীণ সমস্যা নয়, এটা মারাত্মক এক শহুরে সংকটেও রূপ নিয়েছে।

. জলবায়ু পরিবর্তন: নীরব ঘাতক:

আমরা মানি বা না মানি, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। এবং সিলেট সম্ভবত এর অন্যতম প্রধান শিকার। এর প্রভাবগুলো দেখুন:
* ঋতুচক্রের পরিবর্তন: বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হচ্ছে, আবার কখনও অসময়ে তীব্র বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
* বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন: আগে হয়তো টানা কয়েকদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হতো, এখন অল্প সময়ে অতি ভারী বর্ষণ (cloudburst) হচ্ছে, যা ফ্ল্যাশ ফ্লাডের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
* আকস্মিক বন্যার (Flash Flood) প্রকোপ বৃদ্ধি: জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করছেন, এই প্রবণতা যদি চলতেই থাকে, তাহলে আগামী দশ বছরের মধ্যে সিলেট অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হবে। তখন সিলেটে বন্যাহবে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।

. নড়বড়ে বাঁধ আর ঘুমন্ত সতর্কীকরণ ব্যবস্থা:

বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং সময়োচিত পূর্বাভাস। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এই দুই ক্ষেত্রেই আমাদের ঘাটতি ব্যাপক।
* বাঁধের অবস্থা: বেশিরভাগ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো হয় মাটির, নয়তো বালি আর কাদা দিয়ে কোনোরকমে তৈরি। এগুলোর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয় না, ফলে বন্যার প্রথম ধাক্কাতেই সেগুলো ভেঙে যায়। দুর্নীতি আর অবহেলা এই বাঁধগুলোকে আরও দুর্বল করে রেখেছে।
* পানি নিষ্কাশন: নদীখাল খননের অভাবে পানি সরতে পারে না, ফলে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়।
* পূর্বাভাস ও ত্রাণ: যদিও আগের চেয়ে পূর্বাভাস ব্যবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে, তবে তা এখনও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে সময়মতো পৌঁছায় না। আর ত্রাণ? সে তো আরেক দুঃখের কাহিনী। প্রায়শই দেখা যায়, যখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তখন ত্রাণ পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে যায়, অথবা যা পৌঁছায়, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

 

সিলেটে বন্যার বহুমাত্রিক প্রভাব: যখন সব হারিয়ে মানুষ দিশেহারা

বন্যা শুধু কিছু ঘরবাড়ি ডুবিয়ে দিয়েই শান্ত হয় না, এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী এবং বহুমাত্রিক।

. জনজীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়:

* লক্ষ লক্ষ মানুষ রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই থাকে না। এক টুকরো শুকনো জায়গার জন্য মানুষের আকুতি দেখলে পাথরও গলে যাবে।
* শিশু, বৃদ্ধ আর নারীরা পড়েন সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে। পানিবন্দি অবস্থায় দিনের পর দিন কাটাতে হয়। খাবার নেই, বিশুদ্ধ পানি নেই, শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই – এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতি।
* নিরাপদ পানির অভাবে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়ের মতো পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।

. খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষিখাতে চরম সংকট:

* সিলেট অঞ্চল মাছ আর ধানের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বন্যার করাল গ্রাসে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল, বিশেষ করে বোরো ধান, সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। মাছের খামারগুলো ভেসে যায়।
* গবাদি পশুর খাবারের তীব্র সংকট দেখা দেয়। অনেক কৃষক বাধ্য হন নামমাত্র মূল্যে তাদের সহায়সম্বল গবাদিপশু বিক্রি করে দিতে।
* ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা, যারা ধারদেনা করে চাষাবাদ করেছিলেন, তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। ২০২২ সালের বন্যায় প্রায় ৫৩,০০০ হেক্টর কৃষিজমি পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল – একবার ভাবুন এর অর্থনৈতিক প্রভাব!

. থমকে যায় শিক্ষা ব্যবস্থা:

* শত শত স্কুলকলেজ হয় পানিতে ডুবে যায়, নয়তো আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়। ফলে, মাসের পর মাস শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
* শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে যারা পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তারা মারাত্মকভাবে পিছিয়ে পড়ে। এই ক্ষতি শুধু একাডেমিক নয়, মানসিকও।

. স্বাস্থ্যঝুঁকি ও ভেঙে পড়া চিকিৎসা ব্যবস্থা:

* বন্যার সময় চর্মরোগ, চোখের সংক্রমণ, জ্বর, সর্দিকাশির প্রকোপ বহুগুণে বেড়ে যায়।
* হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোও অনেক সময় জলমগ্ন হয়ে পড়ে, অথবা যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে রোগীরা সেখানে পৌঁছাতে পারে না।
* গর্ভবতী মা ও নবজাতকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

. অর্থনীতির চাকায় মরচে ধরে:

* ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, যানবাহন – সবকিছুর ব্যাপক ক্ষতি হয়।
* ছোট ব্যবসায়ীরা, যারা তিল তিল করে নিজেদের ব্যবসা দাঁড় করিয়েছিলেন, তারা মূলধন হারিয়ে পথে বসেন।
* পর্যটননির্ভর এলাকা হওয়ায় সিলেটের অর্থনীতিতে বন্যার প্রভাব অত্যন্ত নেতিবাচক। হোটেলমোটেল খালি পড়ে থাকে, পর্যটকদের আনাগোনা কমে যায়।

. মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর ক্ষত:

* বন্যার এই ভয়াবহতা মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে যায়। সহায়সম্বল হারানোর যন্ত্রণা, প্রিয়জন হারানোর ভয়, আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা – সব মিলিয়ে বন্যাপীড়িত মানুষের মধ্যে উদ্বেগ, হতাশা, এবং পোস্টট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) দেখা দেয়।
* শিশুদের কচি মনে এই দুর্যোগ দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাদের স্বাভাবিক হাসিআনন্দ কেড়ে নেয় বন্যার করাল থাবা।

 

ভবিষ্যতের আশঙ্কা: সিলেট কি আরও বড় বিপদের দিকে এগোচ্ছে?

বিশেষজ্ঞ আর জলবায়ু গবেষকদের কথা শুনলে কপালে ভাঁজ আরও গভীর হয়। তাদের মতে, “সিলেটে বন্যা“-র যে চিত্র আমরা দেখছি, তা হয়তো কিছুই না। সামনে আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে।

. জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী অভিশাপ:

* বৈশ্বিক উষ্ণতা যেভাবে বাড়ছে, তাতে বৃষ্টির ধরন আরও অনিয়মিত ও তীব্র হবে। চেরাপুঞ্জি আর আসামের বৃষ্টিপাত ভবিষ্যতে আরও বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে।
* বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে আকস্মিক বন্যার (Flash Flood) ঘটনা বর্তমানের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেড়ে যেতে পারে।
* বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ সিলেটের প্রায় ৩০% এলাকা প্রতি বছর নিয়মিত বন্যার শিকার হতে পারে। ভাবুন তো, একটা অঞ্চলের প্রায় একতৃতীয়াংশ যদি বছরের একটা বড় সময় পানির নিচে থাকে, তাহলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা, অর্থনীতি, পরিবেশ – সবকিছুর কী অবস্থা হবে!

. পুনরাবৃত্তির ফাঁদ: যখন দুর্যোগই স্বাভাবিকতা:

* ২০২২ থেকে ২০২৫ (চলমান) – টানা চার বছর বড় থেকে মাঝারি আকারের বন্যা। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা একটা স্পষ্ট “Recurring Climate Hazard” বা পুনরাবৃত্তিমূলক জলবায়ু ঝুঁকির ইঙ্গিত। যদি এই ধারা চলতেই থাকে, তাহলে সিলেট আর মৌসুমি বন্যার এলাকা থাকবে না, এটা একটা “Chronic Flood Zone” বা স্থায়ী বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে পরিণত হবে। তখন বন্যা আর দুর্যোগ থাকবে না, এটাই হয়ে উঠবে সেখানকার স্বাভাবিকঅবস্থা।

. শহুরে জীবনের নতুন আতঙ্ক:

* সিলেট শহরের বর্তমান অবকাঠামো এই বিপুল পরিমাণ পানি ধারণ বা নিষ্কাশনের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়।
* ভবিষ্যতে হয়তো সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের রাস্তায় নৌকা চলবে, যা আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে শুরু করেছি।
* অপরিকল্পিত আবাসন, জলাধার ভরাট, আর দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এই শহুরে বন্যার তীব্রতা আরও বাড়বে। জীবনযাত্রা হয়ে উঠবে দুর্বিষহ।

 

তাহলে উপায় কী? আমরা কি এখনও কিছু করতে পারি?

হতাশার আঁধার যতই গভীর হোক, আশার আলো সবসময় থাকে। সিলেটে বন্যা“-র এই চক্র ভাঙতে হলে আমাদের এখনই সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। শুধু ত্রাণ বিতরণ বা तात्ক্ষণিক সাহায্য নয়, দরকার টেকসই সমাধান।

. অবকাঠামোগত উন্নয়ন: মজবুত প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

* নদী ও খাল খনন: এটা সবচেয়ে জরুরি। সুরমা, কুশিয়ারাসহ সিলেটের প্রধান নদীগুলো এবং শহরের ভেতরের খালগুলো নিয়মিত ও বিজ্ঞানসম্মতভাবে ড্রেজিং করে এদের নাব্যতা বাড়াতে হবে। শুধু খনন করলেই হবে না, দখলমুক্তও রাখতে হবে।
* টেকসই বাঁধ নির্মাণ: মাটির বাঁধের বদলে কংক্রিটের মজবুত ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জলরোধক দেয়াল (Flood Wall) তৈরি করা যেতে পারে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
* আধুনিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা: শহর এবং গ্রাম পর্যায়ে পরিকল্পিত ও আধুনিক ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তুলতে হবে। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য জলাধার পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ করতে হবে।

. প্রযুক্তিনির্ভর পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ:

* আগাম ও সঠিক পূর্বাভাস: IoT (Internet of Things) ডিভাইস, স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ, এবং উন্নত আবহাওয়ার মডেল ব্যবহার করে বন্যার অন্তত ৭২ ঘণ্টা আগে সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
* জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছানো: এই পূর্বাভাস শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলেই হবে না, মোবাইল এসএমএস, কমিউনিটি রেডিও, মসজিদের মাইক, এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।

. কমিউনিটিভিত্তিক প্রস্তুতি ও সাড়া দান:

* স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন: প্রতিটি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে হবে, যারা বন্যার আগে, বন্যা চলাকালীন এবং বন্যা পরবর্তী সময়ে উদ্ধার, ত্রাণ বিতরণ ও প্রাথমিক চিকিৎসায় সহায়তা করতে পারবে।
* দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ: স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীসহ সকল স্তরের মানুষকে দুর্যোগ মোকাবিলা ও সারভাইভাল কৌশল শেখাতে হবে।
* নারী ও শিশুর সুরক্ষা: আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ও সুযোগসুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে।

. নীতিমালা প্রণয়ন ও পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ:

* সমন্বিত বন্যা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা: সিলেটের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী, সমন্বিত বন্যা ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে এবং এর বাস্তবায়নে জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। সিলেটে বন্যা প্রস্তুতি ও প্রতিরোধনামে একটি বিশেষ খাত তৈরি করা যেতে পারে।
* “High-Risk Flood Zone” ঘোষণা: সিলেট অঞ্চলকে অতি বন্যা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাহিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জাতীয় পর্যায় থেকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
* জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা: বন্যা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

. আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা:

* যৌথ নদী কমিশনকে সক্রিয় করা: যেহেতু সিলেটের বন্যার একটি বড় কারণ উজানের ঢল, তাই ভারতবাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে কার্যকর আলোচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তথ্য আদানप्रদান এবং অববাহিকাভিত্তিক সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে।
* জলবায়ু তহবিল থেকে সহায়তা: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিল (যেমন Green Climate Fund) থেকে অনুদান ও কারিগরি সহায়তা পাওয়ার জন্য জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে পারে।

. প্রকৃতির সাথে সহাবস্থান:

* জলাভূমি ও হাওর সংরক্ষণ: হাওর এবং অন্যান্য জলাভূমিগুলো প্রাকৃতিক স্পঞ্জের মতো কাজ করে অতিরিক্ত পানি শোষণ করে। এগুলোকে ভরাট না করে বা এদের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট না করে সংরক্ষণ করতে হবে।
* বনায়ন: নদীর তীরবর্তী এলাকায় এবং উজানে পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন ভূমিক্ষয় রোধ করবে এবং পানির প্রবাহকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করবে।

 

সিলেটে বন্যা – প্রকৃতির রুদ্ররূপ নাকি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি?

সিলেটে বন্যাআজ আর কেবল একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম নয়। এটি আমাদের অপরিকল্পিত উন্নয়ন, নদীখাল দখলের মহোৎসব, প্রকৃতির প্রতি অবহেলা, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আসন্ন বিপদকে উপেক্ষা করার এক করুণ পরিণতি। প্রকৃতি তার ভাষায় বারবার আমাদের সতর্ক করছে, কিন্তু আমরা কি সেই সতর্কবার্তা শুনতে পাচ্ছি? নাকি উন্নয়নের নামে ধ্বংসের পথেই হাঁটছি?

যদি আমরা এখনও সচেতন না হই, যদি নদীগুলোকে তাদের স্বাভাবিক গতিতে বইতে না দিই, যদি অপরিকল্পিত নগরায়ণ বন্ধ না করি, যদি কার্যকর বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে না তুলি, তাহলে সিলেটের ভবিষ্যৎ সত্যিই অন্ধকার। তখন হয়তো সিলেটে বন্যাআমাদের গা সওয়া হয়ে যাবে, কিন্তু এর বিনিময়ে যে মানবিক ও অর্থনৈতিক মূল্য আমাদের দিতে হবে, তা হবে অপূরণীয়।

এখনও সময় আছে। সাময়িক ত্রাণ বা তাৎক্ষণিক সাহায্যের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের ভাবতে হবে দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই সমাধান নিয়ে। সরকার, বিশেষজ্ঞ, নাগরিক সমাজ এবং সর্বোপরি সাধারণ মানুষ – সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সিলেট শুধু একটি অঞ্চলের নাম নয়, এটি বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সিলেটবাসীর পাশে দাঁড়ানো মানে পুরো বাংলাদেশকে সুরক্ষিত রাখার পথে একধাপ এগিয়ে যাওয়া। আসুন, আমরা সবাই মিলে সিলেটে বন্যা“-র এই অভিশাপ থেকে আমাদের প্রিয় সিলেটকে রক্ষা করি, আগামী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করি। আমরা কি পারবো না? বিশ্বাস করি, সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই পারবো।

Leave a Reply